লেখক: এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর
পর্ব ৫- হাকেম এ হাদীসটির টীকায় বলেন : ‘হাদীসটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত। কিন্তু বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেননি। উল্লেখ্য,বুখারী ও মুসলিম তাঁদের সহীহ গ্রন্থে সকল সহীহ হাদীস বর্ণনা করার উদ্দেশ্যে রচনা করেননি। এ কারণেই বুখারী তাঁর ‘তারিখুল কাবীর’ গ্রন্থে অসংখ্য হাদীসকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু তাঁর সহীহ গ্রন্থে তা অন্তর্ভুক্ত করেননি।
যাহ্হাক বর্ণনা করেছেন : আবদুল্লাহ্ ইবনে সালিম আল-মাফলুয,যিনি সর্বজন প্রশংসিত ব্যক্তি ছিলেন,তিনি হুসাইন ইবনে যাইদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব থেকে,তিনি উমর ইবনে আলী ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ থেকে,তিনি তাঁর পিতার সূত্রে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে,মহানবী (সা.) ফাতেমাকে বলেন : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।’১৬
তাবারানী বর্ণনা করেন : মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ্ আল হাদরামী,আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সালিম আল-কাবযাজ হতে,তিনি হুসাইন ইবনে যাইদ ইবনে আলী হতে,তিনি আলী ইবনে উমর ইবনে আলী হতে,তিনি জাফর ইবনে মুহাম্মাদ হতে,তিনি তাঁর পিতা হতে,তিনি আলী ইবনে হুসাইন হতে,তিনি হুসাইন ইবনে আলী (রা.) হতে,তিনি আলী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে,রাসূলুল্লাহ্ ফাতেমাকে বলেন : ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।’১৭
হাইসামী বলেন : হাদীসটি তাবারানী হাসান সূত্রে বর্ণনা করেছেন।১৮ সালিহী আশ-শামীও হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন।১৯
অনেক হাদীসবেত্তার দৃষ্টিতেই হাদীসটি মুস্তাফিয (বর্ণনাকারীদের প্রতিটি স্তরে তিন অথবা তার অধিক সংখ্যক বর্ণনাকারী রয়েছে) সূত্রে বর্ণিত এবং তার বর্ণনাকারীরা বিশ্বস্ত। সুতরাং এক্ষেত্রে হাদীসটি রাসূলুল্লাহ্ (সা.) থেকে বর্ণিত হওয়ার বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
দ্বিতীয়ত হাদীসের এ অংশটি থেকে প্রমাণিত হয় যে,হযরত ফাতেমাকে অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করা হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করা অপরিহার্য। এমনকি তাঁকে কষ্ট দান ও ক্রোধান্বিত করা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্কে ক্রোধান্বিত করার শামিল। যেমনভাবে তাঁকে সন্তুষ্ট করা মহান প্রতিপালকের রহমতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ।
তৃতীয়ত বর্ণিত অংশটি থেকে হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর নিষ্পাপ হওয়ার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়। কারণ,মহান সৃষ্টিকর্তা কখনই অন্যায় বিষয়ে সন্তুষ্ট ও অন্যায়ভাবে ক্রোধান্বিত হন না;বরং তাঁর সন্তুষ্টি ও ক্রোধের মানদণ্ড হলো সত্য ও ন্যায়। তাই হযরত ফাতেমা অযাচিত বা অনুচিত কারণে ক্রোধান্বিত হলে তিনি ক্রোধান্বিত হতে পারেন না,যেমনভাবে সত্যনিষ্ঠ বিষয়ে হযরত ফাতেমা সন্তুষ্ট না হলে তিনি সন্তুষ্ট হবেন না। সুতরাং যখন বলা হয়েছে আল্লাহ্ নিঃশর্তভাবে ফাতেমা (আ.)-এর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত হন,তখন নিঃসন্দেহে বলা যায়,হযরত ফাতেমার ক্রোধ,সন্তুষ্টি,আনন্দ ও বিষন্নতা সব সময়ই আল্লাহর ক্রোধ ও সন্তুষ্টির অনুগত। তিনি কখনই পার্থিব ও বৈষয়িক কারণে কারো ওপর ক্রোধান্বিত বা অন্যায়ভাবে কারো প্রতি সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হননি।
এ কারণেই আস-সুহাইল আল-মালিকী২০ তাঁর ‘আর-রাউযুল আনিফ’ গ্রন্থে আবু লুবাবার পূর্বোক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেছেন : ‘এ হাদীসটি প্রমাণ করে,যে হযরত ফাতেমাকে গালমন্দ করে সে কাফের (কুফরীতে লিপ্ত হয়েছে) এবং যে তাঁর জন্য দোয়া করে ও তাঁর প্রতি দরূদ প্রেরণ করে সে তাঁর পিতার প্রতি দরূদ প্রেরণ করেছে।’২১ …চলবে …